প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই)
প্রতিষ্ঠানের ধরণ: সংবিধিবদ্ধ সংস্থা
মন্ত্রণালয়: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
অবস্থান: জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং (মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন রেজু খালের পাশে), উপজেলাঃ রামু, জেলাঃ কক্সবাজার
ক্যাম্পাস এলাকা: ৪০.৬২ একর
ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রেক্ষাপট:
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠান যা দেশের সমুদ্র সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে। ১৮ মার্চ ২০১২ সালে মায়ানমারের সাথে এবং ৭ জুলাই ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারন মামলায় বাংলাদেশের জয় লাভের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার লাভ করেছে। প্রায় বাংলাদেশের সমান এই এলাকার সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপন, সমুদ্র উপকুল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, খনিজ সম্পদ উত্তোলন এবং সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সহ পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়নের যে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের নব-উন্মোচিত এই খাতটির সম্ভাবনা সীমাহীন। এ কারনে সমুদ্র বিষয়ক গবেষনা ও দক্ষ জনবল তৈরিতে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। প্রতিষ্ঠানটি সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কাজ করবে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) নিজস্ব গবেষণা পরিচালনার পাশাপাশি অন্যান্য দেশী বিদেশী সংস্থা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের গবেষণা কাজে সহায়তা প্রদান করবে।
বঙ্গোপসাগরেরর মূল্যবান সম্পদ অনুসন্ধান আহরণ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করা ও দেশের দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালেই সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। ২০০০ সালে জাতীয় সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় জুন, ২০০০ থেকে জুলাই, ২০০৫ মেয়াদে ‘‘জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন (১ম পর্যায়)’’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ২০০৯ সনে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়। বিগত ০২/০৭/২০০৯ ইং তারিখের একনেক সভায় ৪ একর জমির উপর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে জমির পরিমান ৪ একরের পরিবর্তে ৪০ একরে বৃদ্ধি করে প্রকল্প এলাকায় গবেষণাগার, আবাসিক ভবন, মেরিন একুরিয়াম এবং বায়ু বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ প্রকল্পটি পুর্নগঠণ করে পুনরায় উপস্থাপনের নির্দেশ প্রদান করা হয়। ২০১০ সালের মধ্যে কক্সবাজার জেলার, রামু উপজেলার জঙ্গল গোয়ালিয়া পালং মৌজায় ৪০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ সমাপ্ত হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি ১০২.৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। “জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন (১ম পর্যায়)(২য় সংশোধীত)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ল্যাবরেটরিসহ ৩ তলা বিশিষ্ট ইনস্টিটিউট ভবন, ৩টি অফিসার্স কোয়ার্টার, ২টি স্টাফ কোয়ার্টার, মহাপরিচালকের বাসভবন, স্টাফ ডরমেটরি, অফিসার্স ডরমেটরি, ক্লাব ভবন, রেস্ট হাউজ, আনসার ভবন ও স্কুল-কাম কমিউনিটি ভবনসহ মোট ১৩টি ভবন নির্মান করা হয়েছে এবং সমুদ্র গবেষণা উপযোগী ৬৬ ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ১ জন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৩ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারিসহ মোট ১৪ জনবল কর্মরত আছে। তাছাড়া, প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউটের নিরাপত্তার জন্য ১৬ জন আনসার এবং ইনস্টিটিউট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ৮ জন দৈনিক ভিত্তিক জনবল কর্মরত আছে।
বিগত ৫ মার্চ ২০১৫ ইং মহান জাতীয় সংসদে, “বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৫” পাশ হয়। যা সমুদ্র গবেষণার জন্যে একটি বড় অর্জন। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৫ (২০১৫ সালের ০৭ নং আইন) এর ৩ এর উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ০৮/০৯/২০১৫ তারিখে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য ১৯/০৫/২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালা, ২০১৭ জারী করা হয়। উক্ত ইনস্টিটিউটের জন্য মোট ২২৩ টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ২৫/০৫/২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (BORI)-এর পরিচালনা বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইনস্টিটিউট ভবনে ইতোমধ্যে ৫টি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্গানোগ্রাম অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্গানোগ্রামে ৫ টি গবেষণা বিভাগ, ১ টি ওশানোগ্রাফিক ডাটা সেন্টারসহ ৪টি প্রশাসনিক বিভাগ ও ১টি মেডিক্যাল সেন্টার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠেছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দেশের সমুদ্র সম্পদের উদ্ভাবন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এবং রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। গবেষণা বিভাগগুলোর প্রতিটিতে একাধিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দেশে টেকসই (sustainable) প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী ও জাতিসংঘের বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বর্তমান কর্মপরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে গবেষণা কার্যক্রম অধিক মাত্রায় সম্প্রসারিত হবে। সমুদ্র বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম গ্রহন, গবেষণালব্ধ ফলাফলের প্রয়োগ এবং এতদসংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে এই ইনস্টিটিউটটি কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারলে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসাবে আবির্ভূত হবে। আমরা সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে উন্নত জাতি হিসেবে অচিরেই পৃথিবীতে আবির্ভূত হব- এতে কোন সন্দেহ নাই।